মাগুরা প্রতিদিন : মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণির একটি শিশু ধর্ষণের ঘটনার জের ধরে শুক্রবার সদর থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও এ ঘটনায় কারা জড়িত সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।
জুম্মার নামাজের পর ধর্ষকের ফাঁসির দাবি নিয়ে শহরের নোমানী ময়দান এবং ভায়নার মোড় থেকে দুটি গ্রæপ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এদের মধ্যে একটি গ্রæপ শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমাবেশ করে থানা ঘোরাওয়ের ঘোষণা দেয়। পরিস্থিতি উপলব্ধি করে থানার সদর গেট বন্ধ করে দেওয়া হলে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে থানার গেটে ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। এরই মধ্যে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সাদা কাপড়ে আরবী অক্ষর খচিত ব্যানার নিয়ে ধর্ষকের ফাঁসি চাই বলে ¯েøাগান দিতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, দুপুর তিনটার দিকে বিক্ষোভকারীরা থানায় হামলা চালানোর পর মাগুরা জেলা বিএনপি, ছাত্রদল এবং ¯ে^চ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতা-কর্র্মীকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে দেখা যায়। আবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত কিছু শিক্ষার্থীকেও সেখানে দেখা যায়। এ সময় তারা ধর্ষকের ফাঁসির দাবি নিয়ে ¯েøাগান দিতে থাকে।
থানা ঘেরাও ও হামলার বিষয়ে জেলা জাতীয়তাবাদী ¯ে^চ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম বলেন, মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এবং পারনান্দুয়ালী এলাকার একটি চিহ্নিত গ্রæপ যারা অতিতে আওয়ামী লীগের সাথে চলাফেরা করেছে তারাই থানায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে বিশৃক্সখলা সৃষ্টি চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
অন্যদিকে মাগুরা জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য রাতুল বলেন, একটি শিশু ধর্ষণ হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তার উপযুক্ত শাস্তি হোক চাই। শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও শহরে ধর্ষকের বিচার চেয়ে মিছিল বের করা হয়েছে। কিন্তু থানায় হামলার সাথে কারা জড়িত সেটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। তবে পুলিশ সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করলেও নিশ্চিত হতে পারবে।
বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছর বয়সী একটি শিশু। সে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে। গত শনিবার রোজায় স্কুল বন্ধের সুযোগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়েটি মাগুরায় বোনের বাড়িয়ে বেড়াতে যায়। ঘটনার রাতে শিশুটি বোন দুলাভাইয়ের ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলো। ভোর রাতে রোজার সেহরি খাওয়ার উদ্দেশ্যে শিশুটির বোন ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায় ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত দেখতে পেয়ে এবং শিশুটির কাছ থেকে ধর্ষণের বিষয়টি জানতে পেরে সকাল ১১ টার দিকে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২৫০ শয্যা হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক শিরিন সুলতানা জানান, মেয়েটির নি¤œাঙ্গে ক্ষত সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে। পাশবিক নির্যাতন চালানোর কারণে মেয়েটির অবস্থা বেশ শোচনীয় হওয়ায় তাকে মাগুরা থেকে রেফার্ড করা হয়।
শিশুটির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে শিশুটিকে হাসপাতালের আইসিসিইউতে রাখা হয়েছে এবং তার অবস্থার কোনো উন্নতি নেই বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিশুটির চাচা ইবরাহিম শেখ।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম জানান, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো মামলা দেয়া হয়নি। তারপরও পরিবারের প্রাথিমিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিশুটির বোন জামাই এবং বোনের শ^শুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করা হয়েছে। তারপরও থানায় কারা কী উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।